স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ সফরে এসে টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর প্রথমবার জয়ের স্বাদ পেল আয়ারল্যান্ড। আজ আর আটকে ফেলা গেলো না তাদের, সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে তারা। ফলে পাওয়া হলো না টানা দুই ধবলধোলাইয়ের স্বাদ, সিরিজ জয়ের স্বস্তি নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো সাকিব বাহিনীকে। বিপরীতে পল স্টার্লিংদের মুখেও হাসি সান্ত্বনার জয়ে।
শুক্রবারের ম্যাচে জয়ের ভিতটা অবশ্য গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন বোলাররাই, মাত্র ১২৪ রানে আটকে দেন টাইগারদের। অতঃপর ছোট লক্ষ্য সহজেই পাড়ি দিয়েছে তারা। সহজ জয়ের পথে একবারো পা ফসকায়নি আইরিশরা, তাদের পথ দেখিয়েছেন অধিনায়ক স্বয়ং। অপরপ্রান্ত থেকে কিছুটা ধীর গতিতে রান আসলেও নিজের প্রান্তে ঝড় তুলে অর্ধশতক তুলে নেন পল স্টার্লিং। মাত্র ৩১ বলে ক্যারিয়ারের ২২তম অর্ধশতক করেন তিনি।
অর্ধশতক স্পর্শ করার পর যেন আরো আগ্রাসী হয়ে উঠে পল স্টার্লিংয়ের ব্যাট। পরের ওভারেই শরিফুল ইসলামকে হাঁকান এক ছক্কার সাথে টানা তিন চার। শেষ পর্যন্ত রিশাদ হোসেনের প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট হয়ে ফেরেন তিনি, থামেন ৪১ বলে ১০ চার আর ৪ ছক্কায় ৭৭ রান করে। জয় থেকে দল মাত্র তখন ১৬ রান দূরে।
এর আগে তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেটের পতন হয় আয়ারল্যান্ডের। ৯ বলে ৭ রান করা রস অ্যাডায়ারকে ফেরান তাসকিন আহমেদ, ভেঙেছেন তার স্ট্যাম্প। আর পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে লরকান টাকারকে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচ বানান শরিফুল ইসলাম। তবে তাতে পথ হারায়নি তারা।
পুরো ছয় ওভার বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আয়ারল্যান্ড, হাতে বাকি তখনো ৭ উইকেট। ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন কার্টিস ক্যাম্ফার। ক্যাম্ফার ৯ বলে ১৬ ও টেক্টর অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে।
এর আগে অচেনা এক বাংলাদেশের দেখা মেলে আজ। প্রথম দুই ম্যাচে যেখানে টাইগারদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙাই দায় ছিল, সেখানে আজ দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট উল্লাসে মাতে আইরিশরা। এরপর আসা যাওয়ার মিছিল চলতে থাকে একের পরে একে। যেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ান শামীম, তার ব্যাটে ভর করে ১২৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ।
আসা-যাওয়ার মিছিলে দাঁড়িয়ে একাই লড়ে যান শামীম। নেমেছিলে পাওয়ার প্লের ২ বল বাকি থাকতেই, দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন একদম শেষ ওভারে। এর মাঝে তুলে নিয়েছেন লাল-সবুজের জার্সিতে ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম অর্ধশতক, আউট হন ৫ চার আর ২ ছক্কায় ৪২ বলে ৫১ রান করে।
এইদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফেরেন লিটন, মার্ক অ্যাডাইরের বলে ৪ বলে ৫ রান করে ডকরেলের তালুবন্দি হন তিনি৷ পরের ওভারেই নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন ৮ বলে ৪ করে টেক্টরের বলে। আর দারুণ শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি রনি তালুকদার, ১০ বলে ১৪ রানে আউট হন তিনি।
এরপর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে জুটি গড়ে এগিয়ে নিয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখালেও তা আর হয়নি, পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ৬ বলে ৬ রান করে ফেরেন সাকিব। আর পরের ওভারেই ফেরেন হৃদয়ও। ১০ বলে ১২ রান করেন তিনি। ৬.৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৪১/৫!
মাঠে তখন একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান শামিম পাটোয়ারী। অভিষিক্ত রিশাদ হোসেনকে সাথে নিয়ে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তিনি। ২০ রান যোগ করেন দু’জনে মিলে। এরপর আইরিশদের পক্ষে অভিষিক্ত হামফ্রেইজের প্রথম শিকার হয়ে ফেরেন রিশাদ। একবল পরেই ০ রানে ফেরান তাসকিন আহমেদকেও। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেট হারিয়ে ৬৪ রান।
এরপর শামীম জুটি বাঁধেন নাসুম আহমেদের সাথে। টুকে টুকে রান নিতে থাকেন দু’জনে, বাড়াতে থাকেন দলের সংগ্রহ। ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৩ রানের জুটি আসে তাদের দু’জনের ব্যাটে। ১৩ রান করে নাসুম ফিরলে ভাঙে এই জুটি। ১৬ ওভারে পূরণ হয় দলীয় শতরান। পরের ওভারে হয় নবম উইকেটের পতন, ফিরেন শরিফুল। আর শেষ ওভারে ফেরেন শামিম পাটোয়ারী।
আইরিশদের হয়ে ৩ উইকেট নেন মার্ক অড্যাইয়ার, ২ উইকেট নিয়েছেন হামফ্রেইজ।